INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা

আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা

বর্তমান সময়ে ইহুদী ফান্ড দ্বারা পরিচালিত ওহাবী, সালাফী, লা’মাযহাবী ফেরকার লোকেরা সমাজে ইচ্ছামত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল, মওজু, দ্বয়ীফ বলে অপপ্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মতবাদের বিপক্ষে মনে হলেই সেটাকে তারা জাল বলছে। আর এ জন্য তারা উছুলে হাদীছ শরীফ উনার বিভিন্ন অপব্যাখ্যার আশ্রয়ও গ্রহন করতে কার্পণ্য করছে না। শত শত বছর ধরে উম্মত যে হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করে আসছে কেউ কোন আপত্তি করে নাই অথচ হাল যামানায় এসব ওহাবীরা হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে জাল! জাল! বলে চিৎকার শুরু করেছে।

তাদের ধারণা পবিত্র বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্যান্য কিতাবে অনেক জাল বর্ণনা রয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের জানা দরকার একজন মুহাদ্দিছ যখন উনার কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তিনি সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন যাতে কিতাব খানা নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বর্ণিত আছে, ‘খলীফা হারুনুর রশিদ (১৪৮-১৯৩ হিজরী) উনার দরবারে একজন মুরতাদকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো সে বদকার তখন বললো-

أَيْنَ أَنْتَ مِنْ أَلْفِ حَدِيْثٍ وَضَعْتُهَا؟

আমাকে মেরে ফেলবেন ভালো কথা, কিন্তু যে এক হাজার জাল হাদীছ লোক সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছি সেগুলো কি করবেন? 

তখন খলীফা হারুনুর রশিদ বললেন-

فَأَيْنَ أَنْتَ يَا عَدُوَّ اللهِ مِنْ أَبِي إِسْحَاقَ الفَزَارِيِّ، وَابْنِ الـمُبَارَكِ يَتَخَلَّلاَنِهَا، فَيُخْرِجَانِهَا حَرفاً حَرفاً

হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! আমাদের নিকট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু ইসহাক ফাযারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা কি জন্য আছেন? উনারা প্রতিটি জাল শব্দকে ছাকনী দিয়ে ছেঁকে বেছে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৬/৭১, মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ৩৬ পৃষ্ঠা)

এ ঘটনা থেকেই বোঝা গেলো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমামগন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে যাচাই বাছাই করে অনুপ্রবেশকৃত মিথ্যা বর্ণনা কর্তন করে বিশুদ্ধ বর্ণনা আমাদের জন্য কিতাব আকারে সাজিয়ে রেখে গেছেন, এবং কিতাবের ভূমিকায় লিখে গেছেন এই কিতাবে কোন মওজু বর্ণনা নেই। এরপরও সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিচার বিশ্লেষণ হয়েছে, গবেষণা হয়েছে। আর তার উদ্দেশ্য সর্ম্পকেও মুহাদ্দিছীনে কিরামগন স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন-

كان الإسناد لئلا يدخل في الدين ما ليس منه، لا ليخرج ما ثبت من عمل أهل الإسناد

‘সনদ-তো এজন্য যে, শরীয়ত-বহির্ভূত জিনিস যেন সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অনুপ্রবেশ না করে। ইমামগণ উনাদের মাধ্যমে প্রমাণিত জিনিসকে সম্মানিত শরীয়ত হতে বের করার জন্যে সনদ নয়।’ (আজভিবাহ ২৩৮)

হযরত ইবনে মুহাররায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

على بن المدينى يقول ليس ينبغى لأحد ان يكذب بالحديث اذا جاءه عن النبى صلى الله عليه وان كان مرسلا فإن جماعة كانوا يدفعون حديث الزهرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتجم فى يوم السبت او الأربعاء فأصابه وضح فلا يلومن الا نفسه فكانوا يفعلونه فبلوا منهم عثمان البتى فأصابه الوضح ومنهم عبد الوارث يعنى ابن سعيد التنورى فأصابه الوضح ومنهم ابو داود فأصابه الوضح ومنهم عبد الرحمن فأصابه

অর্থ: আমি হযরত আলী বিন মাদিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি যে, কারো জন্য উচিত নয় যে, সে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে সম্বন্ধযুক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করবে বা মিথ্যা বলবে। হোক তা মুরসাল। একবার কতিপয় লোক ইমাম হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগানো সম্পর্কীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগালে মারাত্মক মুছীবতে গ্রেপ্তার হয়। যাদের মধ্যে হযরত উসমান আল্ বাত্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল ওয়ারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে সা’দ তানবুরী রহতুল্লাহি আলাইহি, আবু সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা প্রমুখ ছিলেন। (মা’রিফাতু রিজাল লি ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ২য় খন্ড ১৯০ পৃষ্ঠা)



আর এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

من حدث عني بحديث يرئ انه كذب فهو احد الكاذبين

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলো এবং ধারনা পোষন করলো যে, তা মিথ্যা তাহলে সে মিথ্যাবাদীদের অন্যতম ব্যক্তি। (মুসলিম শরীফ ১/৭, উমদাতুল ক্বারী ৩/২৬৮, মিশকাত- কিতাবুল ইলম- প্রথম পরিচ্ছেদ- হাদীস ১৮৮)

সুতরাং বোঝা গেলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত করে কেউ কিছু বর্ণনা করলে সেটা ওহাবীদের মত বিনা জ্ঞানে মওযু বা জাল বলে অস্বীকার করলে সে নিজেই মিথ্যাবাদী বলে প্রতিপন্ন হবে

সাইয়্যিদুল, মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ حَدَّثَ بِحَدِيثٍ وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ

অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে (ছহীহ বিচার-বিশ্লেষনন ছাড়াই) অভিমত পোষণ করে যে, এই হাদীছ শরীফখানা মওজু বা মিথ্যা সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদীদের অর্ন্তভূক্ত। (মুসনাদে আহমদ ৪/২৫৫: হাদীছ নং ১৮২৬৬, শরহুস সুন্নহ ১/২৬৬: হাদীছ ১২৩, মুসনাদে আবু যায়িদ ১/৩০৬: হাদীছ ২০৬৭, শুয়াবুল ঈমান-মুকাদ্দিমা ১/৮৪, তাফসিরে ইবনে কাছীর ২/৩৬৬)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে-

بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ ، وَلاَ حَرَجَ ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

অর্থ: আমার পক্ষ হতে লোকদের নিকট পৌঁছাতে থাক, যদিও তা একটি মাত্র বাক্য হয়। আর বণী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বর্ণনা করতে পারো, তাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়। (বুখারী শরীফ ৩৪৬১, তিরমিযী শরীফ ২৬৬৯, মুসনাদে আহমদ ৬৮৮৮, মুসনাদে বাযযার ৮৭৬৩, মু’জামুল কবীর তাবরানী ১৫২৫, সুনানে দারিমী ৫৪২)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা থেকে বোঝা গেলো যে, বণী ইসরাঈল বা ইহুদী সম্প্রদায়ও যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত নিয়ে কিছু বলে তা অস্বীকার করা যাবে না বরং কেউ যদি মিথ্যা ঘটনা বানিয়ে নিয়ে আসে তার শাস্তির জন্য জাহান্নাম রয়েছে। তাই ওহাবীদের প্ররোচনায় কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ দেখলেই তার বিরোধিতা করা যাবেনা, বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উলামায়ে কিরাম কি ফায়ছালা দিয়েছেন , কোন আমল চলে আসছে সেটার উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইলমে হাদীছ শরীফ উনাকে মূলত দ্ইুভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। 

  • ১) রিওয়াহ সংশ্লিষ্ট ইলিম যা সনদ অবিচ্ছিন্ন ও বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা, রাবীদের অবস্থা, স্মরনশক্তি, যোগ্যতা ইত্যাদি 
  • ২) দিরায়াহ বা নিয়ম কানুন মূলনীতি ভাবার্থ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ইলিম।

হাফিযে হাদীছ হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব “তাদরীবুর রাবীতে” বর্ণিত আছে, ইলমে হাদীছ শরীফ উনার ৭৩ টা শাখা আছে। প্রত্যেকটা শাখায় রয়েছে আরো অসংখ্য প্রকারভেদ। আর ইমাম হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বয়ীফ সনদের প্রকারভেদই করেছেন ৪৯ প্রকার। সূতরাং এই শাস্ত্র কতটা ব্যাপক আর জটিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জারাহ এবং তা’দীল সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, যা অনেক সুক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর। জারাহ (جرح) হচ্ছে রবীর সমালোচনা করা, দোষ প্রকাশ করা, ত্রুটি অন্বেষন করা। আর তা’দীল (تعديل) হচ্ছে প্রশংসা করা, নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করা, বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেয়া ইত্যাদি। বক্ষ্যমান আলোচনায় জারাহ ওয়াত তা’দীল সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষন ও সেই সাথে ওহাবী সালাফীরা যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ধোঁকাবাজী করে তার নমুনা ও সেই ধোঁকাবাজীর রহস্য উন্মোচন করা হবে ইনাশআল্লাহ।

আসমাউর রিজালসমূহের কিতাব থেকে নফসানিয়াত অনুযায়ী বক্তব্য উল্লেখ করে ওহাবী সালাফীরা যেভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়:

برد بن سنان وثقه ابن معين ، والنساءي ، وضعفه ابن المديني قال ابو حاتم : ليس بالمتين. وقال مرة: كان صدوقا قدرياوقال ابو زرعة : لا بأس به وقال ابو داود، يرمي بلقدر

অর্থ: হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পকে ইমাম ইবনে মুঈন ও হযরত নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, তিনি ছিক্বাহ। হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি দুর্বল। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মজবুত নন । হযরত মুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সত্যবাদী এবং শক্তিশালী। ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার কোন সমস্যা নাই। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। (মিযানুল ইতিদাল ২/১১: রাবী নং ১১৪৭)

হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দুজন উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। অপরদিকে হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দুর্বল। অর্থাৎ কেউ জারাহ করেছেন, আবার কেই তা’দীল করেছেন। এখানে মতপার্থক্য দেখা গেলো।

بشير بن ثابت وثقه ابن حبان وقال ابو حاتم مجهول

অর্থ: হযরত বশির ইবনে সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন ‘মাজহুল’ বা অপরিচিত। (মিযানুল ইতিদাল ২/২৪: রাবী নং ১১৮৯)

এখানেও আমারা দুজন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রিজাল বিশারদের মধ্যে ইখতেলাফ দেখতে পেলাম। একজনের কাছে হযরত বশির ইবনে ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত আবার অন্য একজন ইমামের কাছে সেই রাবীই মজহুল বা অপরিচিত।

بشير بن المهاجر وثقه ابن معين وغيره وقال النسائى ليس به باس وقال احمد: منكر الحديث يجيء بالعجب وقال ابو حاتم: لا يحتج به وقال ابن عدي فيه بعض الضعف

অর্থ: হযরত বশির ইবনে মুহাজির রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্য ইমামগন উনারা ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আশ্চর্যজনক ভাবে মুনকার বর্ণনা করেন। আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনার সম্পর্কে আপত্তি নেই। হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার সামান্য দুর্বলতা আছে। (মিযানুল ইতিদাল ২/৪৩: ১২৪৫)

এখানে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দুজন এই রাবী সর্ম্পকে জারাহ করেছেন। অন্যরা তা’দীল বা প্রশংসা করেছেন।

بكر بن بكار قال النسائى ليس بثقة وقال ابو معين ليس بشىء وقال ابو عاصم النبيل ثقة وقال ابن حبان ثقة، ربما يخطىء. وقال ابو حاتم ليس بالقوى

অর্থ: হযরত বকর ইবনে বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে ইমাম হযরত নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি ছিক্বাহ নন। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, তার ব্যাপারে কোন আপত্তি নাই। হযরত আবু আছিম আন নাবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশ্বস্ত। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি তিনি বলেন ছিক্বাহ, সম্ভবত তিনি তা নন। ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (মিযানুল ইতিদাল ২/৫৮-৫৯: ১২৭৭)

এখানেও ইমাম উনাদের জারাহ ও তা’দীল নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কেউ ছিক্বাহ বলেছেন, কেউ শক্তিশালী নন বলেছেন।

حريث بن السائب البصرى وثقه ابن معين وقال ابو حاتم: ما به باس وقال زكريا الساجي : ضعيف

অর্থ: হযরত হারিছ বিন সায়িব আল বাছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সমস্যাযুক্ত। হযরত যাকারিয়া আস সাজী তিনি বলেন, তিনি দ্বয়ীফ বা দুর্বল। (মিযানুল ইতিদাল ২/২১৭: ১৭৯০)

উক্ত রাবী সর্ম্পকেও ইমামগণ উনাদের পক্ষে বিপক্ষে মত রয়েছে। এরকম ভাবে তাহযিবুল কামাল, তাহযীবুত তাহযীব, তাকরীবুত তাহযীব সহ অনেক আসমাউর রিজাল উনার কিতাবে মতপার্থক্য বর্ণিত আছে। এখানে দেখানোর যে বিষয় সেটা হলো, কোন একজন রাবী সর্ম্পকে একেক ইমাম উনার একেক মতামত থাকে কেউ জারাহ করেন, কেউ তা’দীল। ওহাবী সালাফীরা কোন হাদীছ শরীফ উনাকে মওজু অথবা দ্বয়ীফ প্রমাণ করতে শুধুমাত্র যে রাবী সর্ম্পকে জারাহ বা আপত্তি করা হয়েছে তার বর্ণনাটা পেশ করে। তারা বলে অমুক ইমাম এই রাবীকে জারাহ করেছে তাই এটা গ্রহনযোগ্য নয়, কিন্তু কেউ যে প্রশংসাও করেছেন সে কথা ভুলেও উল্লেখ করে না। আর সাধারন মানুষও যেহেতু উছুল জানে না সেই সাথে রিজালের কিতাব জীবনে চোখেও দেখেনি তাই তারাও সেটা মেনে নিয়ে গোমরাহ হয়। নাউযুবিল্লাহ!

কোনো রাবী সর্ম্পকে জারাহ করলেই কি সেই রাবী বাতিল হয়ে যান?

উল্লেখ্য যে, কোন রাবীকে প্রত্যাখ্যাত করতে হলে তার কারনও স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। রাবি নির্ভরযোগ্য নয় এটুকু বললেই হবে না। কেন গ্রহনযোগ্য নয় তার উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য কারন বলতে হবে। হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন উছূল বর্ণনা করেছেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহনযোগ্য নয়। মতভেদ, ভুলবশত মতপার্থক্য হতে পারে। কারো কারো কাছে একজন রাবী ছিক্বাহ অপর জনের কাছে ছিক্বাহ নয়। এ কারনে জারাহ করা হলে তার কারন উল্লেখ করা আবশ্যক।

হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে একটা ঘটনা আছে যেটা উল্লেখ করলে বুঝতে সহজ হবে। উল্লেখ্য, একবার কোনো এক ব্যক্তি এক রাবীর ব্যাপারে জারাহ বা অভিযোগ করলো। তখন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জারাহ করার কারন কি? সে ব্যক্তি বললেন, আমি তাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেছি। এতে তার কাপড়ে নাপাক লেগে যাওয়া স্বাভাবিক। আর সে নাপাক কাপড়ে নামায পড়ে থাকে, এ অবস্থায় তার আদালত বা দ্বীনদারী রইলো কিভাবে? হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তুমি কি তাকে সেই কাপড়ে নামায পড়তে দেখেছো? সে বললো, না। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এধরনের জারাহ সম্পূর্ণ বাতিল। আর ঐ ব্যক্তিতো কোন ওজরের জন্যও দাঁড়িয়ে পেশাব করতে পারে। (আল কিফায়া ১০৮ পৃষ্ঠা)

আর এ কারনে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قال الحافظ ابن كثير:” بخلاف الجرح فإنه لا يقبل إلا مفسراً لاختلاف الناس فى الأسباب الـمفسقة فقد يعتمد الجارح شيئاً مفسقاً فيضعفه، ولا يكون كذلك فى نفس الأمر أو عند غيره، فلهذا اشترط بيان السبب فى الجرح

অর্থ: হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ফাসিক সাব্যস্তকারী কারণসমূহের ক্ষেত্রে বহুজনের বহুমত রয়েছে। অনেক সময় একজন জারাহকারী একটা বিষয়কে ফাসিক সাব্যস্তকারী কারণিজনিত মনে করে। অথচ বাস্তবে তা সেরকম নয়। এ কারনে জারাহ-এর বেলায় সকলের ঐক্যমতে কারন দর্শানো আবশ্যক। (শরহে ইখতিছারু উলুমিল হাদীছ ১ খন্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা)

কোনো জারাহই গ্রহন করা হবে না যতক্ষন না তার কারণ বর্ণনা করা হবে। কেননা অনেক সময় জারাহকারী এমন বিষয়কেও জারাহর কারণ মনে করেন যা মূলত জারাহ করার মত দোষ নয়। (শরহে মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ ১ খন্ড ১৪০ পৃষ্ঠা)

কোনো একজন রাবীর ব্যাপারে কোন ইমাম প্রশংসা করেছে, তখন সে রাবীর ব্যাপারে ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহনযোগ্য নয়। হাফিযে হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে রাবীকে কোন একজন ইমামও ছিক্বাহ বলেছেন সে রাবীর ব্যাপারে কেউ জারাহ করলে তা গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষন না সে তার কারণ ব্যাখ্যা করে। (তাদরীবুর রাবী)

কোন রাবীর আদালত ও নির্ভরযোগ্যতা সাবস্ত্য হওয়ার পর তার ব্যাপারে কোন জারাহ ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ না এর সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ১৩০ পৃষ্ঠা)

বিভিন্ন জন বিভিন্ন অবস্থান থেকে জারাহ করেছেন, যেমন এ বিষয়ে হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে জারাহ করেছেন, আবার কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দিতামূলক মনোভাব থেকে জারাহ করেছেন, কেউ কেউ নিজের চাইতে বড় ব্যক্তিকে জারাহ করেছেন। এর সবই অগ্রহণযোগ্য। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ৪৪৬ পৃষ্ঠা)

আরো বর্ণিত আছে, দুইজন সমকালীন আলিম উনাদের পারস্পারিক জারাহ বা দোষারোপ গ্রহণযোগ্য হবে না, যতক্ষন না তার দলীল পেশ করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ৪৮৪ পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শেষে বা কোন রাবী উনার নামের পাশে শুধুমাত্র

هذا حديث ضعيف فلان ضيعف فلان ليس بشى

(অমুক হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ, অমুক রাবী দ্বয়ীফ, অমুক অপরিচিত) লিখে দিলেই হবে না, বরং ব্যাখ্যা থাকতে হবে কোন কারনে জারাহ করা হলো।

হযরত আব্দুল হাই লাখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ-এর চাইতে তা’দীলই অগ্রগণ্য। (যফারুল আমানী ২৮১ পৃষ্ঠা)

যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো কোনো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে হযরত আবু রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্জন করেছেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদ ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শুধু মু’তাজিলা বলেই ক্ষান্ত হননি বরং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করতেও নিষেধ করেছেন। (সিয়ারু আলামীন নুবালা ২২/৪৫৬, তারীখে বাগদাদ ২/১৩)

ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম খলিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জহমিয়া বলেছেন। (ওয়াফাতুল আইয়ান ২/৯১)

ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা জারাহ করেছেন। ইমাম হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে হাজম রহমতুল্লাহি আলাইহি মাজহুল বলেছেন। এমনিভাবে ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে যী’ব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম হযরত শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে মঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বয়ং তার ছাত্র জারাহ করেছেন। কিতাব খুলে এসব জারাহ দেখে কি ঐ সমস্ত পৃথিবী বিখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিছ উনাদের বাদ দিয়ে দিতে হবে? তাহলে কি পৃথিবীতে ফিৎনা সৃষ্টি হবে না? কাফিররা এটাই চায় । তারা মুসলামান উনাদের মাঝে ইখতিলাফ সৃষ্টি করে উরারফব ধহফ ৎঁষব কায়িম করতে চায়। আর একারনে তারা ওহাবী সালাফীদেরকে এই কাজের জন্য নিয়োজিত করেছে।

মূলকথা হলো, জারাহ দেখেই কাউকে পরিত্যাগ করা যাবে না। এ বিষয়ে হযরত ইবনে জরীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-

ومن ثبتت عدالته لم يقبل فيه الجرح وما تسقط العدالة بالظن

অর্থ: সূতরাং যার আদালত ন্যায়পরায়নতা প্রমাণিত হয়েছে, তার বিষয়ে কারো জারাহ বা সমালোচনা গ্রহণনযোগ্য হবে না। শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে তার আদালত বা ন্যায়পরায়নতা বিলুপ্ত হবে না। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ১/৪২৯) 

সবাই কি জারাহ করার যোগ্যতা রাখে?

পবিত্র হাদীছ শরীফ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণকারীদের অনেক গুণাবলী থাকতে হবে। যেমন তেমন লোক পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে বা কোন রাবী নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবে না।

হযরত আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়ে কিতাবে উল্লেখ করেন, “পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনাকারীদের জন্য এ গুণাবলী অপরিহার্য যে, তারা নেককার ও নির্ভযোগ্য হবেন। জারাহ ও তা’দীলের বিষয়গুলো ভালোভাবে অবগত হবেন। ন্যায় ও ইনছাফের উপর থাকবেন, কল্যাণকামী হবেন, গোঁড়ামী ও পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত হবেন, অহঙ্কার ও আত্মগৌরব থেকে মুক্ত হবেন। কেননা গোঁড়া ও পক্ষপাতদুষ্ট লোকের কথা গ্রহণযোগ্য নয়।” (ফাওয়াতিহুর রহমূত ২/১৫৪)

হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি তিনি বলেন-

واِنْ صَدَرَ مِنْ غَيْرِ عَارِفٍ باِلْاَسْبَابِ لَـمْ يُعْتَبَرْ بِه

অর্থ : “জারাহ যদি এমন ব্যক্তি করেন যিনি জরাহের নিয়ম কানুন, লক্ষণ, কারণ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নন তার কথার কোনো গুরুত্ব নেই।” (নুয্হাতুন্ নাযার ফী তাওযীহি নুখবাতিল ফিকর  ১/১৭৯)

যেমন একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জারাহ যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা হয়না। ইমাম হযরত যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قَالَتْ: حَضْرَتْ اِبْنُ حِبَّانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ رُبـَمَا قَصَبَ الثِّقَةَ حَتّٰى كَاَنَّه لَا يَدْرِىْ مَا يـَخْرُجُ مِنْ رَّاْسِه

অর্থ : “আমি বলি, ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রায়ই নির্ভরযোগ্যকে দুর্বল বলেন, এমনকি মনে হয় তার মাথা থেকে কি বের হচ্ছে তা তিনি নিজেই বুঝেন না।” (মিযানুল ইতিদাল ১/২৭৪, খুলাছাতুল উলুমিল জারাহ ওয়াত তা’দীল ১/৫০০)

রিজালের কিতাব খুলে দেখা গেছে অনেক ছিক্বাহ রাবী উনাদেরকে ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জারাহ করেছেন, অথচ দুনিয়ার আর সব ইমাম সেই রাবীর প্রশংসাই করেছেন।

অতএব কে জারাহ করলো সে বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে। সবার কৃত জারাহ গ্রহণ করা যাবে না। বরং তাহক্বীক্ব করে নিতে হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ব্যবহৃত পারিভাষিক ভাষাসমূহের পার্থক্য

হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশেষ বিশেষ ইমাম উনাদের বিশেষ বিশেষ পরিভাষা রয়েছে, সেগুলো জেনে রাখা আবশ্যক। (ইখতিছারু উলুমিল হাদীছ ১০৫ পৃষ্ঠা)

সকল ইমাম উনাদের ব্যবহৃত পরিভাষা একই রকম হয় না। একজনের পারিভাষিক ভাষায় যেই বর্ণনা গ্রহণই করা যায় না। আবার অন্য কোন মুহাদ্দিছ উনার সেই ভাষায় তা গ্রহণ করতে কোন সমস্যা থাকে না। কতিপয় উদাহরণ পেশ করা হলো-

(১) আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন কোন রাবী সম্পর্কে বলেন, مُنْكِرُ الْـحَدِيْثِ  (মুনকিরুল হাদীছ) সেই রাবী থেকে হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা জায়িয নেই। (মিযানুল ইতিদাল ১/৪১২)

উছূলে হাদীছ শরীফ সম্পর্কে যারা জ্ঞান রাখেন তারা জানেন ‘মুনকার’ শব্দটা একজন রাবীর জন্য বড় একটা জারাহ। “অপরদিকে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন কাউকে ‘মুনকিরুল হাদীছ’ বলেন তখন কিন্তু অবস্থা এক রকম থাকে না। এক রকম থাকলে পবিত্র বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফই বাদ হয়ে যেত। হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের অনেক নির্ভরযোগ্য রাবীকেও মুনকার বলেছেন।

এমনকি বুখারী শরীফ উনার মধ্যে প্রথম হাদীছ শরীফ উনার রাবী মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকেও মুনকার বলেছেন।” (হাদীউস সারী ৬১৬)

বিখ্যাত তাবিয়ী হযরত ইয়াযীদ বিন খুসাইফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মুনকিরুল হাদীছ” বা পরিত্যাজ্য ও আপত্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন।

এখানে জানার বিষয় হচ্ছে, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন রাবীকে মুনকার বললে সেটা মন্দ অর্থ বুঝানোর জন্য বলেন না, বরং কোন বর্ণনার ক্ষেত্রে একক বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য বলেন।

মূলতঃ এক একজন ইমামের উছূলের পরিভাষা একেক রকম। এ বিষয়ে হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قُلْتُ هٰذِهِ اللَّفْظَةُ يَطْلُقُهَا اَحَـمَدُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَلٰى مَنْ يَّغْرُبُ عَلٰى اَقْرَانِه بِالْـحَدِيْثِ عُرِّفَ ذٰلِكَ باِلْاِسْتِقْرَاءِ مِنْ حَالِه

অর্থ : “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিভাষায় “মুনকার” অর্থ হচ্ছে, যে রাবী বর্ণনার ক্ষেত্রে সমসাময়িক রাবীদের তুলনায় নিঃসঙ্গ অর্থাৎ এমন বর্ণনা করেন যা সমসাময়িক অন্য বর্ণনাকারীগণ করেননি। হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ পরিভাষা রীতি ও অবস্থা পর্যবেক্ষন করে বোঝা গেছে।” (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ১/৪৫৩, লিসানুল মুহাদ্দিছিন ৫/১৯৪)

এক কথায় حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ (গরীব হাদীছ শরীফ কোন হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। যেমন বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফ খানা) এখানে মুনকার দ্বারা পরিত্যাজ্য নয়। আর উনার এই পরিভাষার কারণে উক্ত রাবীর উপর কোন প্রভাবও পড়বে না। যার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফ উনাদের অনেক রাবীর ব্যাপারে মুনকার বলেছেন। এখানে মুনকার শব্দকে জারাহ ধরে আমল করলে ছহীহ বুখারী শরীফ উনার প্রায় ৩০টি হাদীছ বাদ দিয়ে দিতে হবে।

এখন ওহাবী-সালাফীরা কি বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফসহ বাকি মুনকার শব্দে ভূষিত অন্যান্যদের বর্ণনাকে বাদ দিবে?

(২) আবার ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাউকে যদি “মাজহুল” (অপরিচিত) বলেন, সেটা অন্য ইমাম উনাদের মাজহুল বলার মত নয়। ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজহুল বলতে মাজহুলে হাল বুঝায়, কিন্তু অন্যান্য মুহাদ্দিছীনে কিরাম কাউকে মাজহুল বললে সেটা মজহুলে আইন বুঝায়।

হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাজহুল বলেছেন। অথচ তিনি মাজহুল নন। বরং উনার থেকে চার জন ছিক্বাহ রাবী বর্ণনা করেছেন। ইমাম যুহলী রহমতুল্লাহি আলাইহিও উনাকে ছিক্বাহ আখ্যায়িত করেছেন। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ২/১২৪)

(৩) পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত ইবনুল কাত্তান রহমতুল্লাহি তিনি কোন রাবী সম্পর্কে যদি বলেন-

مَنْ لَـمْ يَعْرِفْ لَه حَالٌ لَـمْ تَثْبُتْ عَدَالَتُه

অর্থ: “যার হালত জানা নেই তার আদালতও প্রমাণিত নয়।”

বাহ্যিকভাবে এই শব্দে অনেক বড় জারাহ বা আপত্তি মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। কারণ হযরত ইবনুল কাত্তান রহমতুল্লাহি উনার এ উক্তির দ্বারা অর্থ হচ্ছে, উক্ত রাবী সম্পর্কে উনার সমকালীন কোন ইমাম বা উনার ছাত্র থেকে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণকারী কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যদিও উক্ত রাবী ছিক্বাহ। (মিযানুল ইতিদাল ১/১৬০)

(৪) হাফিয হযরত যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিযানুল ইতিদাল’ কিতাবে অসংখ্য ছিক্বাহ রাবীকে জারাহ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই কিতাবের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন, “হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (আল কামিল কিতাবে) কিছু ছিক্বাহ রাবীর উপর জারাহ করেছেন। তাদেরকে আমিও আমার কিতাবে বর্ণনা করেছি। কিন্তু এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো সমস্ত রাবীদের আলোচনা নিয়ে আসা। পরবর্তীতে আমার কিতাবে যাতে কাউকে সংযুক্ত করতে না হয়। যদিও বাস্তবে তারা আমার দৃষ্টিতে দ্বয়ীফ নন। (মিযানুল ইতিদাল এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য)

সুতরাং বিনা ইলমে কেউ উক্ত কিতাব থেকে কোন রাবীর ব্যাপারে জারাহ-এর দলীল পেশ করলে কি পরিণতি হবে ভেবে দেখুন।

(৫) হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اهل الـحجاز يطلقون كذب في موضع اخطا

অর্থ : “হেযাযের লোকেরা خطاء এর স্থলে কখনো কখনো كذب শব্দ ব্যবহার করে।” (মুকাদ্দিমা ফতহুল বারী, ৪২৬ পৃষ্ঠা)

এখন রাবীদের ব্যাপারে ‘কিযব’ বা মিথ্যাবাদী শব্দ দেখে পবিত্র হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে দেয়ার আগে বিভিন্ন স্থান ভেদে ইমামদের প্রচলিত ভাষা সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে।

রিজাল শাস্ত্রের ইমাম উনাদের এ ধরনের আরো অনেক ব্যাখ্যামূলক ভাষা রয়েছে। যার সম্পর্কে পূর্ণ ইল্ম না থাকলে ভয়াবহ বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে।

এ কারণে হযরত আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-

ولا تبادر تقليدا لـمن لا يعرف الـحديث واصوله اِلى تضعيف الـحديث وتوهينه بـمجرد الاقوال الـمبهمة، والـجروح غير الـمفسرة

অর্থ : “যারা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উছূল ও ফরূ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ইল্ম রাখেন না সহসাই তাদের ইক্বতিদা বা অনুসরণ শুরু করে দিও না। ফলে ব্যাখ্যাহীন জারাহ, স্পষ্ট নয় এমন মন্তব্যের উপর ভর করে কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে দ্বয়ীফ সাব্যস্ত করে দিবে।” (মিনহাজুল নাকদি ফি উলুমিল হাদীছ ১/৯৯, আর রফু ওয়াক তাকমিলি ফি জরহে ওয়াত তা’দীল ৪৮ পৃষ্ঠা)

রিজাল বিষয়ে জ্ঞান না রেখে জাহিরী শব্দের উপর ভর করে ফতওয়া দিলে অনেক ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করতে হবে, যেমনটা করছে বর্তমানে ওহাবী ছালাফী লা’মাযহাবীরা।

জারাহ করার বিষয়ে পূর্ণ ইলিম ছাড়া নফসানিয়াত প্রকাশ পেলে বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফসহ অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবেও জারাহ হয়ে যাবে

হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমরান ইবনে হিত্তান সূত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। অথচ ইমরান ইবনে হিত্তান ছিলো খারিজী সম্প্রদায়ের লোক। শুধু তাই না এ ব্যক্তি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের প্রশংসা করে বেড়াতো। নাউযুবিল্লাহ (ইখতেসারু উলূমিল হাদীছ ৯৯ পৃষ্ঠা)

এছাড়াও ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ ২০ জন মরজিয়া, ২৩ জন ক্বদরিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফিজী, ৯ জন খারেজী, ৭ জন নাসিবী ও ১ জন জহমিয়া কর্তৃক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (সায়িকাতুল মসলিমীন, মিযানুল ইতেদাল, তাহযীবুত তাহযীব, জারাহ ওয়াত তা’দীল, তাহযীবুল কামাল)

একজন ছিক্বাহ রাবী হযরত ইমাম হিশাম দাস্তাওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পকে বলা হয়েছে-

قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ سَعْدٍ كَانَ ثِقَةٌ حُجَّةٌ، اِلَّا اَنَّهٗ يَرَى الْقَدْرَ

পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি বিশস্ত ও দলীল স্বরূপ হলেও তিনি ক্বাদরিয়া ফের্কার ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪, তারিখুল ইসলাম লি ইমাম যাহাবী ৯/৬ ৫৬)

অপরদিকে হযরত আবু দাউদ তায়লাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্ম্পকে বলেন-

هِشَامٌ اَلدَّسْتَوَائِىُّ اَمِيْرُ الْـمُؤْمِنِيْنَ فِى الْـحَدِيْثِ

অর্থ: হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রে আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪)

ইয়াহিয়া ইবনে মঈন ও নাসায়ী উনারা উনাকে বিশ্বস্ত মনে করতেন।

হাফিয হযরত আবু নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আটশ মুহাদ্দিছ থেকে হাদীছ শরীফ অর্জন করেছি। কিন্তু হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে ছালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের চাইতে ভালো ও শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি। অথচ যাহাবী রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, তিনি আক্বীদার ক্ষেত্রে খারিজী ছিলেন (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১৯৫)

ইমাম আবূ সাহল ওয়াসিত্বী শিয়া ছিলো। এ অপরাধে খলীফা হযরত হারুনুর রশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে গ্রেফতারও করেন। উনার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ বর্ণনায় তিনি দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই একমত। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/২৩৮)

হযরত আবী আব্দুল্লাহ নিশাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন ইমাম  সম্পর্কে বলেন-

ثِقَةٌ فِـى الْـحَدِيْثِ رَافِضِىٌّ خَبِيْثٌ

পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত কিন্তু খবীস রাফিজী। (মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ১/১০, তাযকিরাতুল হুফফাজ ৩/১৬৫, সিয়ারু আলাম আন নুবালা ১৭/১৭৪)

আমরা সবাই জানি রাফিযী, শিয়া, খারিজী, ক্বদরিয়া, জহমিয়া, মুশাব্বিয়া এসব বাতিল ফির্কার লোকেরা বদ আক্বীদার, এবং বিদয়াতি। তাহলে এসব বর্ণনাকারী কেন ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে?

বদ আক্বীদার রাবী সম্পর্কেও একেক ইমাম উনাদের একেক দৃষ্টি ভঙ্গি রয়েছে। যেমন, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুতাজিলা ফের্কার লোকদের বর্ণিত হাদীছ শরীফ গ্রহন করতেন না। (আল ফারকু বাইনাল ফিরকি ৩৫৮ পৃষ্ঠা)

হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তাদের (শিয়া) নিকট পবিত্র হাদীছ বর্ণনা করো না, তাদের কাছ থেকে গ্রহণও করা যাবে না। (আল মুনত্বাকা ২১ পৃষ্ঠা)

হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রাফিযী শিয়াদের চাইতে অধিক মিথ্যা রচণাকারী সম্প্রদায় আমি দেখিনি। (আল কিফায়া ২০২ পৃষ্ঠা)

তাহলে বর্তমানে ওহাবী সম্প্রদায় কি বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে দিবে? তারাইতো জোর গলায় প্রচার করে থাকে-

اَصَحُّ الْكِتَابِ بَعْدَ كِتَابِ اللهِ اَلصَّحِيْحُ الْبُخَارِيُّ.

অর্থ: “পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পর সর্বাধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হলো ছহীহ বুখারী।” (আল হিত্তাহ ফি যিকরিল ছিহাহুস সিত্তাহ ১/২১৯)

ওহাবী সালাফীরা কি জানে বুখারী শরীফেই দ্বয়ীফ সনদের বর্ণনা আছে:

বর্ণনাকারী যদি তার উস্তাদকে বাদ দিয়ে সরাসরি পরবর্তী ব্যাক্তি থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সেক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উছুল অনুযায়ী মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ হয়। উছূলের কিতাবে মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ উনাকে বর্জনীয় বলা হয়েছে। অথচ মজার বিষয় হলো ছহীহ বুখারী শরীফেও মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন-

قَالَ مَالِكٌ : أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ أَخْبَرَهٗ اَنَّ أَبَا سَعِيْدٍ الْـخُدْرِىَّ اَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيَهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ

উক্ত সনদখানা বুখারী শরীফ উনার “কিতাবুল ঈমান” অধ্যায়ে ৪১ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ (যারা বাংলায় দেখতে চান তারা ইসলামী ফাউন্ডেশনের অনুবাদে ৪০ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ দেখতে পারেন)। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি তিনি সরাসরি ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। অথচ হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার (৯৩-১৭৯ হিজরী) বিছাল শরীফের প্রায় ১৫ বছর পর ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৯৪-২৫৬ হিজরী) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ গ্রহন করেন। তার মানে হচ্ছে ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত পাননি। সাক্ষাত না পাওয়ার পরও মাঝখানে বর্ণনাকারী বাদ দিয়ে সরাসরি ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক ব্যবহার করেছেন।

শুধু তাই নয় ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে এমন মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা ১৩৪১ টি। তারমধ্যে ১১৭১/১১৮১ টি হাদীছ শরীফ উক্ত বুখারী শরীফেই অন্যস্থানে সনদ সহ বর্ণিত আছে। আর বাকি ১৬০/১৭০ টি হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফে কোথাও সনদ সহ বর্ণিত হয়নি। (তাদরীবুর রাবী ১/৭৭)

এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَاَمَّا مَا لَـمْ يُوْرِدْهُ فِىْ مَوْضَعٍ اخَرٍ مِمَّا أَوْرَدَهٗ بـِهذِهِ الصِّيْغَةِ فَمِنْهُ مَا هُوَ صَحِيْحٌ اِلَّا أَنَّهٗ لَيْسَ عَلى شَرْطِهٖ وَمِنْهُ مَا هُوَ حَسَنٌ وَمِنْهُ مَا هُوَ ضَعِيْفٌ فَرْدٌ اِلَّا اَنَّ الْعَمَلَ عَلى مُوَافِقَتِه وَمِنْهُ مَا هُوَ ضَعِيْفٍ فَرْدٌ لَا جَابِرَ لَهٗ

আর যে পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো সনদ সহ বুখারী শরীফ উনার অন্যস্থানে নেই এবং মজহুল শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো কিছু ছহীহ হলেও বুখারী শরীফ উনার শর্ত অনুযায়ী ছহীহ নয়। বাকিগুলো কিছু হাসান কিছু দ্বয়ীফ। যার কোন কোনটার স্বপক্ষে উম্মত উনাদের আমল রয়েছে। অবশিষ্টগুলো এমন দ্বয়ীফ যার সমর্থনে কোন কিছু নেই। (ফতহুল বারী ১ খন্ড ১৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা : দারুল মা’রিফা, বইরুত, লেবানন)

وَاَمَّا مَا لَـمْ يُخْرِجْهُ فَيَحْتَمِلُ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ عِلَّةٌ خُفْيَةٌ مِنْ اِنْقِطَاعٍ اَوْ اِضْطِرَابٍ اَوْ ضُعْفٍ رَاوٍ

অর্থ: আর যেই পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো অন্যস্থানে সনদসহ নেই সেগুলোর মধ্যে সুক্ষ্ম দুর্বলতা থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। যেমন- ইনকেতা, ইসতিরাব, রাবী দুর্বল ইত্যাদি। (তাগলীকুত তালীক আলা ছহীহ বুখারী ২ খন্ড ১১ পৃষ্ঠা)

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত “তাগলীকুত তালীক আলা ছহীহ বুখারী” দেখা যেতে পারে। সুতরাং বুখারী শরীফ হলেই এক ঢোক পানি বেশি খাওয়ার সুযোগ নাই।

দ্বয়ীফ হলেই কি হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা যাবে না?

যারা এমন কথা বলে তাদের জেনে রাখা দরকার ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে এমন অনেক হাদীছ শরীফ  বর্ণনা করেছেন যার সনদ দ্বয়ীফ। বিখ্যাত হাদীছ শরীফ বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “তাকরীবুত তাহযীব” নামক কিতাবে প্রায় ৫২ জন রাবীকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন যারা সকলেই “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবের রাবী। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যদি দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ নাই মানতেন বা গ্রহণ না করতেন তাহলে কি “আদাবুল মুফরাদ”  কিতাবে ঐ সকল রাবীদের রেওয়ায়েত গ্রহণ করতেন? 

এছাড়া মূল বুখারী শরীফেই একধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ আছে যার রাবী সর্ম্পকে দ্বয়ীফ বলা হয়েছে। যেমন, মুহম্মদ বিন আব্দুর রহমান তুফাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনাকে হাফিজ আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুনকারুল হাদীছ বলেছেন । (ফতহুল বারী ৬১৫ পৃষ্ঠা)

আরেকজন রাবী হচ্ছেন “হযরত উবাই বিন আব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি”। তিনি ছহীহ বুখারী শরীফ এর রাবী। উক্ত রাবীর উপস্থিতিসহ বুখারী শরীফের ‘কিতাবু জিহাদ’ অধ্যায়ের ২৮৫৫ নং হাদীছ শরীফের সনদ হচ্ছে-

حدثنا علي بن عبد الله بن جعفر حدثنا معن بن عيسى حدثنا أبي بن عباس ابن سهل عن أبيه عن جده قال

উক্ত রাবী ‘হযরত উবাই বিন আব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি’  সর্ম্পকে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি দ্বয়ীফ। হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ। ইমাম হযরত নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (মিযানুল এতেদাল ১ম খন্ড ৭৮ পৃষ্ঠা)

আরেকজন রাবী হচ্ছেন, মুহম্মদ বিন তালহা মুসাররিফ কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। বুখারী শরীফ এর ২৮৯৬ নং হাদীছ শরীফের সনদ-

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ طَلْحَةَ عَنْ طَلْحَةَ عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ  سَعْدٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ

মুহম্মদ বিন তালহা মুসাররিফ কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত নাসাঈ রহমতুল্লাহি উনারা দ্বয়ীফ বলেছেন। (মিযানুল ইতিদাল)

আবার এমন অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে, যেগুলো ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা  ছহীহ বলে গ্রহণ করেন, কিন্তু ছিহাহ সিত্তার অন্যান্য ইমামগণ সেগুলো ছহীহ নয় বলে পরিত্যাগ করেন। (সায়েকাতুল মুসলিমীন)

আর তাই বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “আলফিয়া” কিতাবের হাশিয়ায় উল্লেখ করেনে যে, “ছহীহ বুখারী শরীফের ৮০ জন ও ছহীহ মুসলিম শরীফের ১৬০ জন রাবীর বর্ণনাকৃত পবিত্র হাদীছ শরীফ জঈফ বলে প্রমাণিত হয়েছে।” (নুয্হাতুন্ নাজার)

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ইমাম দারে কুতনী, আবূ আলী ও আবূ দাউদ দামেস্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের ২০০ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জঈফ বলে উল্লেখ করেন।” (মুকাদ্দিমায়ে শরহে মুসলিম)

ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছহীহ বুখারী শরীফে এরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফও রয়েছে, যা কারো মতে ছহীহ, আর কারো মতে দ্বয়ীফ। (শরহে বুখারী)

কাশফুযযুনুন, মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ইত্যাদী কিতাবে ছহীহ বুখারী শরীফের কিছু কিছু  হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলে প্রমাণ করা হয়েছে।

কোন মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে “ছহীহ নয়” শব্দটি ব্যবহার করলেই তা জাল হয় না

বর্তমানে ওহাবী-সালাফীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু ইমাম মুহাদ্দিছ উনাদের বক্তব্য لا يصح (ছহীহ নয়) এমন বক্তব্য দিয়ে হাদীছ শরীফ জাল বলার অপচেষ্টা করে। কিন্তু ছহীহ নয় দ্বারাই কি জাল হয়ে যায়? ছহীহ’র পরের স্তর হাসান, তারপরের স্তর দ্বয়ীফ, তারপরে গিয়ে হচ্ছে মওদ্বু বা জাল। ছহীহ নয় বললে হাসান হওয়াতে নিষেধ কোথায়?

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قَوْلُ السَّخَاوِّىِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِـي الضَّعْفَ وَالْـحَسَنَ

অর্থ : “ইমাম হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ‘ছহীহ নয়’ দ্বারা পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান ও দ্বয়ীফ হওয়া নিষেধ করে না।” (আসরারুল মারফুয়া ১/৩৪৯)

হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لَا يَلْزِمُ مِنْ نَفِىِ الثُّبُوْتِ ثُبُوْتَ الضَّعْفِ لِاِحْتِمَالٍ اَنْ يُّرَادَ بِالثُّبُوْتِ الصِّحَةَ فَلَا يَنْتَفِى الْـحَسَنَ

অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ সাবিত নয় বা দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বয়ীফ হওয়া আবশ্যক নয়। হাদীছ শরীফখানা সাবিত নয় দ্বারা ছহীহ নয় বুঝানো হয়েছে। তাই বলে হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয়নি।” (তুহফাতুল আবরার ১/৪)

এছাড়া হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তা’কিবাত আলাল মওদ্বুয়াত’ কিতাবে, হযরত তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘তাযকিরাতুল মাওদ্বুয়াত’ কিতাবে, আব্দুল হাই লখনবী রচিত ‘আসরারুল মারফুয়া’ কিতাবে, আল্লামা আযলুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘কাশফুল খফা’ সহ অসংখ্য কিতাবে ছহীহ নয় দ্বারা হাসান হাদীছ শরীফ বুঝানো হয়েছে কখনোই জাল বলা হয়নি।

তাই যারা বিভিন্ন কিতাব থেকে ‘ছহীহ নয়’ উদ্বৃতি দিয়ে হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলার অপচেষ্ট করে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

দ্বয়ীফ সনদে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে উছুলে হাদীছ শরীফ উনার হুকুম

বিশ্ববিখ্যাত ফক্বীহ্ ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় এবং দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জন করার জন্য আমল করাও জায়িয।

এ সম্পর্কে হযরত ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহিহ আলাইহি তিনি বলেন-

اَلضَّعِيْفُ غَيْرُ الْـمَوْضُوْعِ يَعْمَلُ بِهٖ فِـىْ فَضَائِلِ الْاَعْمَالِ.

অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যা মওদ্বু নয়, তা ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়িয।” (ফতহুল ক্বাদীর ১/৩৪৯)

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ্ হযরত ইমাম হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَلضَّعِيْفُ يَعْمَلُ بِهٖ فِـىْ فَضَائِلِ الْاَعْمَالِ اِتِّفَاقًا

অর্থ : “সকলেই একমত যে, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করা জায়িয আছে।” (আল মওদ্বুয়াতুল কাবীর পৃষ্ঠা ১০৮)

শুধু তাই নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়, তাহলে তা হাসান লি গায়রিহির দরজায় পৌঁছে যায় এবং এটা তখন আহ্কাম ও আক্বাইদের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন-

ويعمل با لضعيف ايضافى الاحكام اذا كان فيه احتياط.

অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ আহকামের জন্য গ্রহণযোগ্য, যখন তাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে অর্থাৎ যখন হাসান লি গায়রিহি হবে।” (তাদরীবুর রাবী ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এমনকি যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়। আর তাই ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত রায়ের উপর দ্বয়ীফ হাদীছ শরীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قَالَ أَبُوْ حَنِيْفَةَ الْـخَبْـرُ الضَّعِيْفُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْلٰـى مِنَ الْقِيَاسِ، وَلَا يَـحِلُّ الْقِيَاسُ مَعَ مَوْجُوْدِهٖ.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ, যদিও তা রাবীদের কারণে দ্বয়ীফ হয়, তা ক্বিয়াস হতে উত্তম। যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়।” (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস সুনান, পৃষ্ঠা ৫৯)

ইমাম হযরত সাখাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَكَذَا اِذَا تَلَقَّتِ الْأُمَّةُ الضَّعِيْفَ بِالْقُبُوْلِ يَعْمَلُ بِهٖ عَلَى الصَّحِيْحِ حَتّٰـى أَنَّه يَنْزِلُ مَنْزِلَهُ الْـمُتَوَاتِرَ فـِيْ أَنَّه يَنْسَخُ الْـمَقْطُوْعَ بِهٖ

অর্থ : “অনুরূপ, উম্মত যখন কোন হাদীছ শরীফকে কবুল করে নেয় তখন, ছহীহ কথা হলো, সেই দ্বয়ীফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা যায়। এমনকি হাদীছ শরীফখানা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং তা দ্বারা অকাট্য বিষয়ও রহিত হয়ে যায়।” (ফাতহুল মুগিছ ১/২৮৮)

এছাড়া ফতওয়ায়ে শামী, মিযানুল আখবার, উমদাতুল ক্বারী, মিরকাত শরীফ সহ অনেক কিতাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তা “হাসান” স্তরে উন্নিত হয়। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَتَعَدَّدُ الطُّرُقُ وَلَوْ ضَعُفَتْ يَرْقِي الْـحَدِيْثُ اِلٰى الْـحَسَنِ

অর্থ : “একাধিক সনদে যদি দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয় তাহলে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান হাদীছ শরীফ হিসাবে সাব্যস্ত হবে।” (আসরারুল মারফুয়া ১/৪৮১)

এ ব্যাপারে পৃথিবীর সব মুহাদ্দিছ ও হাদীছ শরীফ বিশারদ উনারা একমত এবং এ বিষয়টি স্ব স্ব কিতাবে দলীলসহ আলোচনাও করেছেন। সুতরাং দ্বয়ীফ সনদ দেখিয়েই মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।


দ্বয়ীফ বর্ণনাসমূহের গ্রহণীয় স্থান ,যে সমস্ত স্থানে দ্বয়ীফ বর্ণনাসমূহ গ্রহণীয় তা নিম্নরূপ-

১.         মুস্তাহাব পর্যায়ের বিধানাবলী

২.         কোন প্রমাণিত আমলের ফযীলতের বর্ণনা

৩.         তারগীব তথা কোন আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান

৪.         তারহীব তথা কোন কাজে ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে

৫.         সাওয়াব কোন আমলের নেকী সম্পর্কে

৬.         যুহদ দুনিয়া বিমূখতা সম্পর্কে

৭.         মাকরূহে তানযীহী সংক্রান্ত বিষয়ে

৮.         কিসাস পূর্বের নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে

৯.         ইকাব বা কোন কাজের শাস্তি সম্পর্কে

১০.       রাকায়েক বা যে সব কারণে অন্তর নরম হয় সে সম্পর্কে

১১.       সীরাত তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা অন্য কারো জীবনী মুবারক সম্পর্কে,

১২.       মানাকিব বা কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বা অন্য কারো বৈশিষ্ট সম্পর্কে

১৩.      মালাহিম বা যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে,

১৪.       মাগাযী বা বিজয়ীদের কর্মকান্ড ও গুণাবলী সম্পর্কে,

১৫.       তারীখ বা ইতিহাস সম্পর্কে,

১৬.       তাফসীর বা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে।

এক কথায় আক্বায়িদ ও আহকামের মধ্যে হালাল-হারাম, মাক্রূহে তাহরীমী, ফরজ, ওয়াজিব ছাড়া সমস্ত বিষয়ে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য।

কোন হাদীছ শরীফ ছহীহ দ্বয়ীফ নির্ণয় করা সবার জন্য বৈধ নয়

হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনুস সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরবর্তী যুগের মানুষদের জন্য ছহীহ, দ্বয়ীফ নির্ণয় করা সঠিক মনে করতেন না।

তিনি বর্ণনা করেন-

فَقَدْ تَعَذَّرَ فِي هٰذِهِ الْاَعْصَارِ الْاِسْتِقْلَالُ بِاَدْرَاكِ الصَّحِيْحِ بِـمُجَرَّدِ اِعْتِبَارِ الْاَسَانِيْدِ

অর্থ : “শুধু সনদের উপর নির্ভর করে এই যুগে ছহীহ হাদীছ শরীফ আখ্যা দেয়া অনেক কঠিন কাজ।” (মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ ফি উলুমিল হাদীছ ১/১৭, শরহুল তাবছিরাহ ওয়া তাযকিরাহ ১/৪৩)

হাফিযে হাদীছ ইমাম হযরত শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনুস সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মান নির্ণয়ের দরজা মুতাআখ্খিরীন (পরবর্তী আগত) উনাদের জন্য এ কারণে বন্ধ করতে চান, যাতে এ রকম স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অযোগ্য শ্রেণীর লোকেরা ঢুকে না পড়ে। যারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ, ইলাল খুব ভালোভাবে জানে না, যারা অধ্যায়ন ও গবেষণার উপর শতভাগ সচেতন নয়। (ফতহুল মুগিছ ১৬২ পৃষ্ঠা)

এই বিষয়গুলো অনেক জটিল ও স্পর্শকাতর। সবাই যদি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে তবে নিজের ফিরক্বার মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নফসানিয়াতের শিকার হবে। আর অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে বাতিল বলে ঘোষণা করবে। কারণ ক্ষেত্র বিশেষে শুধু সনদ দেখেও রায় দেয়া যায় না। এ বিষয়ে উছূলে হাদীছ শরীফ ও উম্মতের আমলসহ অনেক বিষয় দেখতে হয়। সবাই যদি নিজেদের মত ঊছূল বর্ণনা করতে যায় তাহলে যে ঘটনা ঘটবে সেটা প্রমাণসহ উল্লেখ করা হলো।

ওহাবী-সালাফীদের নফসানিয়াত রক্ষায়, চুরি করার উজ্জল দৃষ্টান্ত

ওহাবী সালাফীরা চুরি ও প্রতারণা করতে করতে এতই নিচে নেমেছে যেটা বলার ভাষা নেই। তারাবীহর নামাযকে তারা কোনভাবেই ২০ রাকায়াত মানতে পারে না। কিন্তু তারা না চাইলে কি হবে ২০ রাকায়াততো ছহীহ সনদে প্রমাণিত। সালাফীদের যেহেতু একটা মুখস্ত অভ্যাস শিখিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মতের খিলাফ হলেই সেটা জাল এবং সেই সনদের সবাই মিথ্যাবাদী হয়ে যায়। নাঊযুবিল্লাহ।

তারাবীহর নামাযকে অস্বীকার করতে গিয়ে এমনই একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সালাফীরা। কিন্তু ভুল জায়গায় হাত পড়ে গেছে, স্বয়ং বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই হস্তক্ষেপ।

মুছান্নাফে ইবনে আবি শায়বা উনার একটি হাদীছ শরীফ যেখানে ২০ রাকায়াত তারাবীহর পক্ষে মুরসাল সনদ বর্ণিত আছে।

এই হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী হচ্ছেন-

يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ

‘হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি’।

যাকে সালাফীদের তাওহীদ পাবলিকেশন্স হতে প্রকাশিত বুখারী শরীফ উনার টীকায়- এক সালাফী মতবাদের টীকাকারক ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছে এবং বলেছে উনার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, অর্থাৎ উনার কোন বর্ণনা গ্রহণ করা যাবে না। (ছহীহ বুখারী, প্রকাশনী: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৯০ হাজী আব্দুল্লাহ লেন বংশাল, ঢাকা। নবম প্রকাশ: সেপ্টেঃ, ২০১২; ২য় খণ্ড ৩৪৩ পৃষ্ঠা)

কিন্তু বাংলায় প্রবাদ আছে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন। সুতরাং চোর ধরা পড়ে গেলো। সেই তাওহীদ প্রকাশনীর সম্পাদনায় বুখারী শরীফ উনার ১ম খ- ২য় পৃষ্ঠা ১ নং হাদীছ শরীফ উনার সনদটি নিম্নরূপ (দাগ দেয়া অংশে রাবী উনার নাম)-

حَدَّثَنَا الْـحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِـيْ مُـحَمَّدُ بْنُ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيُّ، اَنَّهُ سَـمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَـمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ

বুখারী শরীফ উনার ১ম হাদীছ শরীফ “ইন্নামা আ’মালু বিন্নিয়াত” এই মশহুর হাদীছ শরীফ উনার রাবী হচ্ছেন- হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সালাফীরা তারাবীহকে অস্বীকার করতে নফসের দ্বারা প্রতারিত হয়ে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে মিথ্যাবাদী বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। অথচ বুখারী শরীফ উনার ১ নং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাফীদের কাছে চরম সত্যবাদীই আছেন। যেই তিনি অন্য কিতাবে তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত বলে ফেললেন, সাথে সাথে মিথ্যাবাদী হয়ে গেলেন। নাঊযুবিল্লাহ!

এর জবাব ওহাবী সালাফীরা কি দিবে? তারা কি তাদের মনগড়া ওহাবী- সালাফী মতবাদ টিকাতে উক্ত রাবীকে জারাহ করে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাল হাদীছ বর্ণনাকারী বানিয়ে দিবে?

ভয়ানক বিষয় হচ্ছে- এই অপবাদ দিতে গিয়ে তাওহীদ পাবলিকেশন্সের সালাফীরা হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিও মিথ্যারোপ করেছে। কারণ হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব ‘জারাহ ওয়াত তা’দীল’ কিতাবে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেফারেন্স টেনে এনে বলেন, তিনি নাকি উক্ত রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।

আসমাউর রিজাল (৬৭ পৃষ্ঠার পর)

অথচ কিতাব অনুসন্ধান করে দেখা যায় মিথ্যাবাদীতো বলেননি, বরং ছিক্বাহ ও হাদীছ শরীফ উনার চরম সত্যাবাদী শায়েখ বলেছেন। হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَبَا زُّرْعَةَ يَقُوْلُ: يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْاَنْصَارِيِّ مِنَ الثِّقَاتِ

অর্থ : “হযরত ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য।” (জারাহ ওয়াত তা’দীল ৯/১৪৯)

সুতরাং উছূলে হাদীছ শরীফ উনার ইল্ম ছাড়া যারা আজ বাড়াবাড়ি শুরু করেছে, হাজার বছর ধরে চলে আসা মশহুর আমলকৃত হাদীছ শরীফ উনাকে মওদ্বু বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মূলতঃ মুসলমান উনাদের বিভ্রান্ত করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। সেই সাথে, যাতে মুসলমান উনারা আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্য হাছিল করতে না পারে সেই চেষ্টা করা। নাঊযুবিল্লাহ।

বর্তমান যামানার ওহাবীদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন আকার ধারণ করেছে। তারা কথায় কথায় ওমুক হাদীছ শরীফ জাল, মওদ্বু ইত্যাদি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

এদের সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنَا مِنْ غَيْرِ الدَّجَّالِ اَخْوَفُ عَلَيْكُمْ مّـِنَ الدَّجَّالِ فَقِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُلَمَاءُ السُّوْءِ.

অর্থ : “আমি আপনাদের ব্যাপারে এক সম্প্রদায়কে দাজ্জালের চেয়েও অধিক বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি এবং এই ব্যাপারে অধিক চিন্তিত রয়েছি (যাদের ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর)। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কোন সম্প্রদায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, উলামায়ে সূ’।” (বিদায়াতুল হিদায়া ১ম খ- ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর। বর্তমান যামানা হচ্ছে এমনই এক ভয়াবহ ফিতনার যামানা। এখন ঈমান রক্ষা করা অনেক কঠিন। এই ফিতনা বেষ্টিত যামানায় সবার উচিত নিজের ঈমান-আমল হিফাযত করতে মহান মুজাদ্দিদে আযম, ইমামে আ’যম, গ¦উছুল আ’যম, সুলত্বনুন নাছীর, হাকীমুল হাদীছ, জামিউল আলক্বাব, জামিউল ইল্ম ওয়াল হিকাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার পাক ক্বদম মুবারকে আসা। সেই সাথে মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে কুল কায়িনাতের সবার উচিত ইল্ম, আমল, ইখলাছ ও অফুরন্ত নিয়ামত হাছিল করা। একমাত্র পৃথিবীর বুকে তিনিই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বিষয়টা প্রকাশ করছেন, যাতে করে মানুষ হিদায়েত লাভ করে আল্লাহওয়ালা হতে পারে।



0 Comments:

Thanks for comment here.......

Responsive

Ads

Here